175-35-তাহারা ছিল দয়ার সাগর-১

তাহারা ছিল দয়ার সাগর

*  একদিন মদিনার দুই ব্যাক্তি একজন যুবক কে টেনে হিছরে অর্ধপৃথিবীর  শাসক, খলিফা, হযরত

 ওমর রা. এর দরবারে হাজির করল। এবং বিচার দাখিল করলো,

যে,এই যুবক আমাদের পিতাকে হত্যা করলো,

আমরা এর ন্যায় বিচার চাই। 

তখন খলিফা (প্রধানমন্ত্রী) হযরত ওমর রা. সে যুবক কে প্রশ্ন করলো, তার বিপক্ষে করা দাবি সম্পকে........? 

তখন সেই যুবক বলেন, তাদের দাবি সম্পুর্ণ সত্য। 

আমি ক্লান্তির কারণে বিশ্রামারেন জন্য একটি খেজুর গাছের ছায়া বসলাম। ক্লান্ত শরীরে অল্পতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম গাছের নিছে। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার পছন্দের একমাত্র বাহন আমার উট টি পাশে নেই।

খুঁজতে খুঁজতে কিছু দূরে গিয়ে পেলাম, তবে তা ছিল মৃত। পাশেই ওদের বাবা ছিল। যে আমার সেই উট কে  তাদের বাগানে প্রবেশের 

অপরাধে পাথর মেরে হত্যা করেছে। আমিও রাগান্বিত হয়ে তাদের বাবার সাথে তর্কাতর্কি 

করতে করতে এক পর্যায়ে তাদের বাবা কে আমি পাথর দিয়ে আঘাত করে ফেলি, ফলে সে সেইখানে 

মারা যায়....।

সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়ে গেছে। যার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী। 

বাদিরা বলেন:-আমরা এর মৃত্যুদন্ড চাই। 

হযরত ওমর রা. সব শুনে বললেন, উট হত্যার বদলে একটা উট নিলেই হতো, কিন্তু তুমি বৃদ্ধা কে

হত্যা করেছো। হত্যার বদলে হত্যা। এখন তোমাকে

মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। তোমার

কোনো শেষ ইচ্ছা থাকলে বলতে পারো।

নওজোয়ান বললো, আমার কাছে কিছু ঋণ আর মানুষের আমানত আছে। আমাকে যদি কিছুদিন সময় দিতেন তবে আমি বাড়ি গিয়ে আমানত ও 

ঋনগুলো

পরিশোধ করে আসতাম।  

খলিফা হযরত ওমর রা. বললেন, তোমাকে একা ছেড়ে দিতে পারি না। যদি তোমার পক্ষ থেকে

কাউকে জিম্মাদার রেখে যেতে পারো, তবে তোমায়

সাময়িক মুক্তি দিতে পারি। 

নিরাশ হয়ে নওজোয়ান বললো, এখানে আমার

কেউ নেই। যে আমার জিম্মাদার হবে।

এ কথা শুনে হঠাৎ মসলিসে উপস্থিত, আল্লাহর নবীর এক সাহাবী হযরত আবু জর গেফারি রা. দাড়িয়ে 

বললেন, আমি হবো ওর জাবিনদার।


 সাহাবী হযরত  আবু জর গেফারি রা. এই উত্তরে 

সবাই হতবাক। একেতো অপরিচিত ব্যাক্তি, তার উপর হত্যা কান্ডের আসামির জামিনদার...?  

খলিফা বললেন, আগামী শুক্র বার পর্যন্ত

নওজোয়ান কে মুক্তি দেওয়া হলো। জুম্মার আগে

নওজোয়ান মদিনায় না আসলে, নওজোয়ানের বদলে

আবু জর কে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। 

মুক্তি পেয়ে নওজোয়ান ছুড়তে লাগলো মাইলের পর 

মাইল, দূরে তার বাড়ির দিকে। আবুজর রা. 

চলে গেলেন তার বাড়ির দিকে। এদিকে দেখতে দেখতে জুম্মাবার এসে গেছে,  নওজোয়ানের কোনো 

খবর নাই।


হযরত ওমর রা.রাষ্ট্রীয় পএবাহক পাঠিয়ে দিলেন

আবুজর গিফারি রা.এর কাছে। পএে লেখা আজ

শুক্রবার বাদ জুম্মা সে যুবক যদি না আসে আইন

মোতাবেক আবুজর গিফারির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা

হবে। আবুজর যেন সময় মতো জুম্মার প্রস্থতি নিয়ে

মসজিদ নববীতে হাজির হয়। 

খবর শুনে সারা মদিনা থমথমে অবস্থা।

একজন নিষ্পাপ সাহাবী আবুজর গিফারি আজ বিনা

দোষে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত হবে।

জুমার পর মদিনার সবাই মসজিদে নববীর সামনে

হাজির।  সবার চোখে পানি 😢😢। জল্লাদ প্রস্থত।

জিবনে কতো জনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে তার কোনো হিসেব নাই। কিন্তু আজ কিছুতেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেনা জল্লাদ। আবুজহের মতো একজন সাহাবী সম্পুণ বিনা দোষে আজ মৃত্যু দন্ডে 

দণ্ডিত হব,এটা মদিনার কেউ মেনে নিতে পারছে না। এমন কি মৃত্যুদন্ডের আদেশ 

প্রধানকারী খলিফা ওমর রা. ও অনবরত কাঁদছেন। তবু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

কারো পরিবর্তনের হাত নেই। 


আবু জর রা. তখন ও নিশ্চিন্তে মনে হাসি মুখে 

দাড়িয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্থত।

জল্লাদ ধীর পায়ে আবুজর রা. দিকে এগুচ্ছেন

আর কাঁদছেন। আজ যেন জল্লাদের

পা চলে না। পায়ে যেন কেউ পাথর

বেধে রাখছে।

এমন সময় এক সাহাবী জল্লাদ কে বললো,হে

জল্লাদ একটু থামো। মরুভূমির ধুলার ঝড় উড়িয়ে ঐ

দেখ কে যেন আসতেছে। হতে পারে ঐটা

নওজোয়ানের ঘোড়ার ধুলি। একটু দেখে নাও, 

তারপর না হয় আবুজহের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করিও। 

ঘোড়াটি কাছে আসলে দেখা যায় সত্যিই এটা ঐ

নওজোয়ান। নওজোয়ান দ্রুত খলিফার কাছে এসে বললো, হুজুর বেয়াদবি মাফ করবেন। রাস্তায় যদি

ঘোড়ার পায়ে ব্যাথা না পেত, তবে সঠিক সময়ে

আসতে পারতাম। 


বাড়িতে আমি একটুও দেরী করিনি। বাড়ি পৌছে

গচ্ছিত আমানত  ও ঋণ পরিশোদ করি এবং তার পর বাড়ই

এসে বাবা-মা নববধূ কে সব খুলে বলে শেষ বিদায় নিয়ে মৃত্যুর প্রস্থতি নিয়ে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। এখন আবু জর রা.ভাইকে ছেড়ে দিন।

আমাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে পবিত্র করুণ। কেয়ামতের দিন খুনি হিসেবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াইতে 

চায় না। 

আশে-পাশে সব নিরব থমথমে অবস্থা। সবাই

হতবাগ, কি হতে চলেছে...? 

যুবকের পুনরাই পিরে আসা অবাক করে দিল 

সবাইকে। খলিফা ওমর রা. বললেন, তুমি জানো

তোমাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে, তারপরে ও

কেন ফিরে এলে.?? 

উত্তরে সেই যুবক বলে:-আমি ফিরে এসেছি,

কেই যাতে বলতে না পারে, এক মুসলমানের 

বিপদে আরেক মুসলমান সাহায্য করতে এগিয়ে 

এসে নিজেই বিপদে পড়ে গেছিলো।

এবার ওমর রা. আবুজর রা. কে জিজ্ঞেস করলেন,

আপনি কেন না চেনা সত্যেও 

এমন জামিনদার হলেন......??

উত্তরে হযরত আবুজর গেফারী রা. বললেন,

পরর্বতি কালে কেউ যাতে বলতে না পারে, এক মুসলমান বিপদে পড়ছিল, অথচ কেউ

তাকে সাহায্য করতে আসেনি।

এমন কথা শুনে, হঠাৎ  বৃদ্ধার দুই সন্তানের  মধ্যে 

একজন বলে উঠলেন, হে খলিফা,

আপনি তাকে মুক্ত করে দিন। আমরা তার উপর করা দাবি তুলে নিলাম।

হযরত ওমর রা. বললেন কেন...?

তাদের মাঝে একজন বলে উঠলো, কেউ যেন বলতে

না পারে, এক মুসলমান অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল করে

নিজেই  শিখার করে ক্ষমা চাওয়ার পরেও অন্য 

মুসলমান তাকে ক্ষমা করে নি।

 (হায়াতুত সাহাবা :-৮৪৪)

Comments

Popular posts from this blog