মহিলাটি যখন বাজারে পৌঁছে তখন ইমাম আবু হানিফা (মৃ : ১৫০হি.) দোকানে বসা। বেশিরভাগ সময় তার সঙ্গীই দোকান দেখাশোনা করে। তবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় তিনিও বসেন। মহিলা ইমামকে দোকানে দেখে সোজা তার কাছে চলে যায়। তার হাতে একটি রেশমি কাপড়। এটি তিনি বিক্রি করবেন। ইমাম আবু হানিফাকে গিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমি কাপড়টি বিক্রি করতে চাই। আপনি কি কিনতে ইচ্ছুক?

ইমাম জিজ্ঞেস করলেন, দাম কত?

মহিলাটি বলল, ১০০।


ইমাম আবু হানিফা ব্যবসায়ী মানুষ। কাপড়ের দাম তার ভালোই জানা আছে। এই কাপড়ের দাম এত কম হবে না কিছু্তেই। মহিলা না জানার কারণে কম বলছে। তাই তিনি বললেন, কাপড়ের দাম তো আরও বেশি হবে। 

মহিলা বলল, তাহলে ২০০ দেন।

ইমাম বললেন, আরও বেশি।


এভাবে মহিলা ১০০ করে বাড়াতে বাড়াতে ৪০০ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল। কিন্তু তিনি তাতেও নেবেন না। বললেন, এটার মূল্য আরও বেশি।


মহিলার এবার খানিক সন্দেহ হলো। হুজুর কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন? মনের কথা তিনি মনে চেপে রাখলেন না, বলেই ফেললেন—আপনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন?

ইমাম বললেন, ঠিক আছে। আপনি কাপড়-চোপড়ের দাম জানে এমন কাউকে নিয়ে আসুন। মহিলা ঝানু এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসল। সে কাপড় ধরে বলল, এর মূল্য তো ৫০০! তখন তিনি ৫০০ দিয়েই তার থেকে কাপড়টি কিনে নেন।


হ্যা, এমনই ছিলেন তিনি। চলুন তো একবার তার আয়না দিয়ে আমরা নিজেদের চেহারাটা দেখি নিই। এত দামি জিনিস এত কমদামে পেয়ে গেলে আমরা কী করতাম? বিক্রেতা যেখানে স্বেচ্চায় দিয়ে দিচ্ছে—যদিও না জানার কারণে—আমরা তো খুশিতে বাগবাগ হয়ে যেতাম। কিন্তু তিনি তা করেননি, মহিলার অজ্ঞতার সুযোগ গ্রহণ করেননি। বরং পেশাদারি আমনতদারীতার এক মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

তাই তো বলা হয়, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি!


তথ্যসুত্র:

১। আল-খায়রাতুল হিসান, ইবনে হাজার হাইতামি রহ. (মৃ : ৯৭৪হি.) পৃ : ১০৬

২। আবু হানিফা, শায়েখ আবু যাহরা রহ. (মৃ : ১৯৭৪ হি.) পৃ : ২৮




Comments

Popular posts from this blog