একদা এক চরিত্রহীনা কুলটা পরম ভ্রষ্টা সুন্দরী রমণী কোথাও হতে বুস্তান শহরে এসে লোকদেরকে কুকর্মে লিপ্ত করতে লাগলো ৷ প্রত্যেকবার দেহ ভোগের বিনিময়ে তাকে 200 দেরহাম দিতে হতো ৷ তার রূপ ও সৌন্দর্য এতই মোহনীয় ও আকর্ষণীয় ছিল যে, এই বিরাট অংক করতে ধনী গ্রাহকরা মোটেই কুণ্ঠিত হতো না ৷ এক মাসকাল শহরের বুকে তারে হারাম ব্যবসার চলতে থাকার কুফল এই দাঁড়ালো যে, অনেক সমৃদ্ধশালী পরিবার সর্বস্বহারা এবং অনেক লোক চরিত্রের দিক থেকে ধংস হয়ে গেল ৷ সমাজের শুভাকাঙ্ক্ষী চিন্তাশীল লোকেরা তৎকালের মশহুর অলি হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি এর নিকট উপস্থিত হয়ে এই বিষয়ে তাকে বিস্তারিত জানান ৷ লোকেরা তার নিকট আরজ করল হুজুর শহরের বুক হতে এ পাপ নিবারণের কোন সুব্যবস্থা করুন ৷ নতুবা অল্পদিনের মধ্যেই শহর ধ্বংস হয়ে যাবে ৷ লোকদের মুখে এ ঘটনা শোনার পর একদা মাগরিবের নামাজ শেষে হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি দুইশত দিরহাম সাথে নিয়ে ওই রমনীর বাড়ির দিকে যাত্রা করলেন এবং তার ঘরের দরজার সামনে পৌঁছে সেখানেই বসে রইলেন ৷ যথাসময়ে যথারীতি গ্রাহকদের আগমন শুরু হল ৷ কিন্তু গৃহদ্বারে হযরত বায়েজিদকে বসা দেখে সকলেই ফিরে গেল ৷ আনুমানিক রাত দশটা পর্যন্ত গড়ে কোন গ্রাহক প্রবেশ না করায় রমণীর মনে ভাবনা জাগল যে, অন্যান্য দিন এতক্ষণে গ্রাহকদের সীমাহীন ভিড় লেগে যায়, আর একজন ও আসলো না ৷ এর কারণ কি ? সে তখন নিজের চাকরকে অবস্থা জানার জন্য বাইরের দিকে পাঠিয়ে দিল ৷ চাকর ঘরের দরজায় এসে দেখল, হযরত বায়েজিদ বুস্তামি রহমাতুল্লাহি বসে রয়েছেন ৷ আর লোকরা দরজা পর্যন্ত এসে তাকে দেখে ফিরে যাচ্ছে ৷ সকলের মনে বিস্ময় জাগল যে, বাইজিদ রহমতুল্লাহি আজ এই দেহ করতে পসারিণীর গৃহদ্বারে কেন এসেছেন? চাকরটি হযরত বায়েজিদ কে নিশ্চয়ই চিনত না ৷ সে ঘরের অন্দরে যেয়ে রমণীকে খবর দিল ৷ যে মিসকিন গ্যাসের এক ব্যক্তি ঘরের দরজায় বসে রয়েছে তাকে দেখে অন্যান্য লোকজন এসে ফিরে যাচ্ছে ৷
এ খবর পেয়ে রমণীটি ওই চাকর মাধ্যমে নবাগত লোকটিকে হযরত বায়েজিদ জিজ্ঞাসা করল, কিরূপে এখানে আসলেন, আমার এখানে তো গরিব লোকের আসার কথা নয় ৷ কারণ এখানকার রেট অনেক চড়া, বলুন আপনি কি উদ্দেশ্যে এসেছেন হযরত বাইজিদ রাহমাতুল্লাহ জবাবে বললেন, আমি রমণীর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছি এ কথাটি শুনে চাকরটি ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলল আরে জনাব তিনি খুব উঁচুদরের রমনী, দুইশত দেরহামের কম হলে তিনি কারো সাথে কথা বলেন না ৷ তখন হযরত বাইজিদ বললেন আমি 200 দেরহাম দিতে রাজি আছি সারকথা হযরত বায়েজিদ রহমতউল্লাহ ঘরের ভেতর তাসরিফ নিলেন এবং নগদ দুইশত দিরহাম প্রদান করিয়া মহিলাটি কে বলল আজকের জন্য তুমি আমার হয়ে গেছ ৷ সুতরাং আমি যা বলব তোমাকে তাই মানতে হবে ৷ মহিলা উত্তর করলো জিহা, আপনি ঠিকই বলেছেন, তখন তিনি বললেন প্রথমে তুমি তোমার পরিধানের এই সমস্ত রেশমি কাপড় বদলিয়ে সাদা পোশাক পর, তারপর ওযু কর, একখানি জায়নামাজ সহ আমার নিকট চলে আসো, তার নির্দেশ অনুযায়ী কাপড় বদলিয়ে
জায়নামাজসহ তার সামনে হাজির হল, তিনি হুকুম করলেন, জায়নামাজে কিবলামুখি হয়ে দাড়াও সে হুকুম তামিল করলো, তাকে কেবলা মুখী অবস্থায় জায়নামাজে দাঁড় করিয়ে দিয়ে হযরত বায়েজিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি অত্যন্ত কাকুতি-মিনতির সাথে আল্লাহপাকের দরবারে কে বলে মোনাজাত করতে লাগলেন, হে আল্লাহ তুমি সর্বজ্ঞ সবকিছুই তুমি দেখাও আমার সাধ্য যতটুকু ছিল আমি ব্যয় করেছি, ব্যভিচারের ঘৃণ্য পর্যায় হতে বের করে এনে আমি তাকে নামাজির বেশে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি, আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি, অবশিষ্ট আছে শুধু তার মনের গতি পরিবর্তন করে দেয়া এ তোমার ওই করণীয় কাজ, এবার তুমি তোমার দায়িত্ব পালন কর, পতিতার ঘরে বসেও লোকটি খোদাকে ভুলেননি বরং তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে করুণ ফরিয়াদ জানাচ্ছেন, এ অভাবনীয় ব্যাপার দেখে রমণীর মনে ভাবান্তর ঘটলো, আল্লাহর ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল, নিজের আজীবনের সমস্ত পাপাচারের কথা স্মরণ করে অনুশোচনায় ভরায় ভীতি বিহ্বল অন্তরে ভাবতে লাগলো, নিজেতো পাপীয়সি আছি, আল্লার বহু বান্দা কেও পাপে লিপ্ত করেছি, দিবারাত্রি শুধু পাপের খেলায় করেছি, এ অবস্থায় আমার না জানি কি অবস্থা ঘটবে, সেই সব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ এক মুহুর্তে সজোরে আল্লাপাক নাম উচ্চারণ করে সে হযরত বাইজিদ এর পাক কদমে লুটিয়ে পড়ে, আরজ করল হুজুর আমাকে তোওবা করান, এবং আপনার সেবিকা রূপেই হতভাগিনী কে কবুল করুন, হযরত বাইজিদ রহমতুল্লাহি তাকে তওবা করালেন, ওই মুহূর্তে হতেই যাবতীয় পাপ কাজ ছেড়ে দিল, এবং শেষ পর্যন্ত ওই জমানার ইবাদত গুজার সতী সাদুবি মহিলা হিসেবে অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারী হলো ৷ ওয়াজে বেনজির পৃষ্ঠাঃ 180
Comments
Post a Comment