*  হাসান বসরী র: অসুস্হ অগ্নি পুজক শামউনকে দেখতে যায়,কালেমার বিনিময়ে জান্নাতের গেরান্টি পত্র দেয়

*  হাসান বসরী র: অসুস্হ অগ্নি পুজক শামউনকে দেখতে যায়,কালেমার বিনিময়ে জান্নাতের গেরান্টি পত্র দেয়


   এক প্রতিবেশী। নাম শামাউন। অগ্নির উপাসক। দীর্ঘায়ু লোক। বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। আক্রান্ত হলেন এক কঠিন অসুখে। জীবনের আশা অতি ক্ষীণ, ক্ষীণতম। তাঁর আসন্ন মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। হযরত হাসান (র)-এর কানেও এল কথাটা। তিনি প্রতিবেশীর অন্তিম শয্যার পাশে গিয়ে বসলেন। দেখলেন, শামাউনের সারা শরীরে কালো কালো দাগ। তিনি বললেন, আগুন আর ধোয়া নিয়েই তো কাল কাটালে, এখন একবার আল্লাহকে মেনে নাও। ইসলাম কবুল কর। হয়তো আল্লাহর রহমত নেমে আসবে তোমার ওপর। শামাউনের চোখে তাচ্ছিল্যের আভাস। বললেন, দু'টি কারনে তোমাদের ধর্মের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা আছে। প্রথম কারনটি হল- ইসলাম ধর্মালম্বীরা দিনরাত দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত থাকে। আর দ্বিতীয় কারন- তারা মুখে মৃত্যুর কথা বলে বটে তবে এমন সব কাজ কারবার করে, যা মৃত্যু-ভীতদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কেননা, ঐ সকল কাজে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।

       হযরত হাসান (র) বললেন, শুভাকাঙ্খীর মতই কথা বলেছ তুমি। কিন্তু, তুমি কি করলে? আজীবন আল্লাহকে ভুলে আগুনের উপাসনা করে কি তাঁর বিরাগভাজন হলে না? শোন, আমি কোনদিন আগুনের উপাসনা করিনি। কিন্তু আমি যার ইবাদত-বন্দেগী অর্চনা করি, তাঁর দয়ায় আগুন আমার বশীভূত। সে আমার কোন ক্ষতি করবে না।

     শামাউন বললেন, হ্যা, আগুন আমার কোন ক্ষতি করবে না আমার তা বিশ্বাস হয় না, হাসান (র) বললেন কিছু আগুন আনাও পরীক্ষা করে দেখি।

     আগুন আনা হল। হযরত হাসান (র) শামাউনকে আগুনের ওপর হাত রাখতে বললেন। কিন্তু তার সাহস হল না। তখন হযরত হাসান (র) নিজের একখানা হাত আগুনের ওপর চাপিয়ে দিলেন। আল্লাহর রহমতে তা পুড়ল না। একগুচ্ছ লোমও না।

     দৃশ্য দেখে শামাউন অবাক। তার মনে এল গভীর অনুশোচনা। তিনি বললেন, ভাই হাসান! সত্তর-আশি বছর ধরে চরম অন্যায় করে এসেছি। এখন কি তার প্রায়শ্চিত্তের অবকাশ আছে? থাকলে মুক্তির উপায় বলে দাও।

      হযরত বললেন নিশ্চয় উপায় আছে। তুমি ইসলামে দীক্ষা নাও। তারপর পবিত্র হৃদয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। তিনি তোমাকে মুক্তি দেবেন।

     শামাউন বললেন, মৃত্যুর পর শাস্তির পরিবর্তে আল্লাহ আমাকে মুক্তি দেবেন, এই মর্মে যদি তুমি আমাকে একখানি পত্র লিখে দাও, তাহলে আমি মুসলমান হতে পারি।

      হযরত হাসান তাঁর কথামত একখানি কাগজে লেখে শামাউনের হাতে দিলেন। শামাউন আবার কাগজখানিতে উপস্থিত ব্যক্তিদের সই নিয়ে তা আবার হযরত হাসান (র)-কে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, মৃত্যুর পর দাফন করার সময় পত্রখানা আমার সঙ্গে দিও। আর তুমি নিজের হাতে আমাকে গোসল করিয়ে কবরে শুইয়ে দিও। অতঃপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। আর অনতিকাল পরেই মারা গেলেন।

     তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সব কাজ শেষ হল। শামাউনের দাফন কর্ম সম্পন্ন করে হাসান (র) নিজের কথাই ভাবতে লাগলেন। তিনি পূর্বে থেকেই নিজেকে পাপী বলে মনে করতেন। এখন তিনি ভাবতে শুরু করলেন, অন্যের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আল্লাহর অধিকারে হস্তক্ষেপ করলাম।

     এখন আমার মত পাপীর মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয় কে। সারা রাত তিনি আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে রইলেন। সে এক অবিরাম, অন্তহীন প্রার্থনা। শেষ রাতে স্বপ্ন দেখলেন, শামাউন মাথায় ঝকঝকে মুকুট, সুন্দর পোশাক পরে জান্নাতের উদ্যানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কি খবর শামাউন ভাই? তোমার অবস্থা কি?

     শামাউনের প্রফুল্ল জবাব: যেভাবে আমাকে দেখতে পাচ্ছ, আমি সে রকমই আছি। আল্লাহর রহমতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। আল্লাহর দীদারও লাভ করেছি। তোমার পত্রখানায় খুব কাজ দিয়েছে হাসান ভাই। নাও-বলে পত্রখানা তিনি হাসান (র)-কে ফিরিয়ে দিলেন।

     ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, সত্যিই শামাউনকে দেয়া পত্রখানা তাঁর হাতের মুঠোয়। যেন স্বপ্ন নয়, এই মাত্র শামাউন স্বশরীরে এসে পত্রখানা তাঁকে দিয়ে গেল। তখন তিনি তাঁর প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, প্রভু গো! আপনার কাজের গূঢ় রহস্য উদঘাটন করার সাধ্য আমার নেই। সারা জীবন যে আগুন নিয়ে পড়ে থাকল, তাকে মাত্র একবার কলেমা পড়ার কারনে আপনি মুক্তি দিলেন, শুধু তাই না- তাকে দেখাও দিলেন। তাহলে আজীবন যারা ঈমান মেনে রয়েছে, তাদের যে আপনি মুক্তি দেবেন- তাতে কোন সন্দেহ নেই। শামাউনের জান্নাতবাস তাঁর চেতনায় নবদিগন্তের দুয়ার খুলে দিল।

Comments

Popular posts from this blog