হজরত হুজাইফা বিন ইয়ামেন একজন প্রসিদ্ধ সাহাবি ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশ্বস্ত ছিলেন। যখন তিনি এবং তার পিতা মুসলমান হয়ে মদীনায় আসছিলেন, পথিমধ্যে আবু জেহেলের বাহিনীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ঘটে যায়। সে সময় আবু জেহেল তার বাহিনী নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিল।তারা হজরত হুজাইফা (রাদি.) এর পিতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তোমরা যাচ্ছ কোথায়? উত্তরে তারা বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করার উদ্দেশে মদীনায় যাচ্ছি। একথা শুনে আবু জেহেল বলল, তা হলে তো তোমাদের ছেড়ে দেয়া যাবে না। কেননা যেখানে গিয়ে তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। জবাবে তারা বললেন- আমরা তো কেবল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব না। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করব না।আবু জেহেল তাকে বলল, তা হলে আমার সঙ্গে ওয়াদা কর মদীনাতে গিয়ে তোমরা লড়াইয়ে লিপ্ত হবে না। তখন তিনি এই ওয়াদা করলেন। তৎক্ষণাৎ আবু জেহেল তাদের ছেড়ে দিলো। হজরত হুজাইফা যখন মদীনা মুনাওয়ারাতে পৌঁছলেন দেখতে পেলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে যুদ্ধের জন্য বদর প্রান্তরে রওয়ানা হয়েছেন। পথিমধ্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে যায়,হক বাতিলের প্রথম যুদ্ধ গযওয়ায়ে ‘বদর’:ইসলামের সর্বপ্রথম যুদ্ধ এই বদর যুদ্ধ। আর এটা এমন এক যুদ্ধ যে ব্যাপারে কোরআনে বলা হয়েছে ‘হক বাতিলের মধ্যে ফয়সালা হওয়ার যুদ্ধ’। ওই যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের ‘বদরি সাহাবি’ বলা হয়। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বদরি সাহাবিগণের মর্যাদা ছিল অনেক বেশি। বদরি সাহাবাগণের নামসমূহ জিকির হিসেবে পড়া হয়ে থাকে। তাঁদের নাম পড়ার দ্বারা আল্লাহ পাক দোয়া কবুল করে থাকেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল বদরি সাহাবিগণের ব্যাপারে বলেছেন, আল্লাহ পাক সকল বদরি সাহাবিগণকে মাফ করে দিয়েছেন। বদর যুদ্ধ এমন মর্যাদাপূর্ণ যুদ্ধ ছিল।গর্দানে তারবারি রেখে করানো ওয়াদা:হজরত হুজাইফা (রাদি.) যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করলেন তখন আবু জেহেলের সঙ্গে কৃত ওয়াদার কথা উল্লেখ করলেন। এবং আবু জেহেল কর্তৃক তাদেরকে আটকের কাহিনী বর্ণনা করেন। এবং বললেন, ‘আমি কেবল জীবন বাঁচানোর জন্য আবু জেহেরে সঙ্গে ওয়াদা করে এসেছি যে, আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করব না। কেবল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যেই যাচ্ছি। এখন আমি আপনার নিকট আরজ পেশ করছি- ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই বদরের যুদ্ধ হক বাতিলের সর্বপ্রথম যুদ্ধ। আর আপনি যেহেতু এখন বদরের দিকে রওয়ানা হয়ে চলেছেন। তাই আমার বড় ইচ্ছে এই যুদ্ধে আমি শরিক হব। আবু জেহেল তো আমার গর্দানে তারবারি রেখে আমাকে ওয়াদা করিয়েছে আমি যাতে আপনার সঙ্গে যুদ্ধে শরিক না হই। আমি যদি তার সঙ্গে এই ওয়াদা না করতাম তা হলে তো আবু জেহেল আমাকে ছাড়তো না। এজন্যেই তো আমি ওয়াদা করেছি। কাজেই আপনি আমাকে এখন অনুমতি প্রদান করুন যাতে এ যুদ্ধে আমি অংশ গ্রহণ করতে পারি এবং এর ফজিলত আমি লাভ করতে পারি। তুমি ওয়াদা করে জবান দিয়ে এসেছো:রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন- তুমি আবু জেহেলের সঙ্গে ওয়াদা করে এসেছো যে, কেবল আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আসবে এবং আমার সঙ্গে মিলে যুদ্ধে আবু জেহেলের বিরুদ্ধে লড়বে না। কাজেই তোমাকে আমি যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করতে পারব না। এটা এমন এক সময়ের ঘটনা যখনমুসলমানদের কঠিন পরীক্ষা চলছিলো। এ জবান দ্বারাই মানুষের পরীক্ষা হয়ে থাকে যে, ব্যক্তি নিজের জিহ্বা দ্বারা কৃত ওয়াদার প্রতি কতটুকু যত্নবান। অথচ আমরা কেমন মানুষ,এহেন অবস্থায় হাজারো যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকি। যেমন: যে ওয়াদা আমি করে এসেছি এটাতো অন্তর থেকে করিনি। সেতো আমাকে জোরপূর্বক ওয়াদা করিয়েছে। এছাড়াও নানা ধরনের খোঁড়া যুক্তি পেশ করতে দ্বিধাবোধ করা হয় না। অথচ আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করা, তাও আবার এমন ঘোরতর দুর্বিপাকের সময়; যে মুহূর্তে এক এক জন যোদ্ধার মূল্য অনেক। কারণ মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা কেবল ৩১৩ জন ছিল। তাদের নিকট শুধু ৭০টি উট, ২টি ঘোড়া এবং ৮টি তাওবারি আর বাকীদের নিকট লাঠি কিংবা পাথর,এ অল্প সংখ্যক সৈন্য এক হাজারের বিশাল সৈন্যবাহিনীর মোকাবেলায় নিতান্তই ক্ষুদ্র দল। এজন্য এহেন মুহূর্তে একজন মুসলমানের মূল্য অনেক বেশি। অথচ রাসূল সা: হজরত হুজাইফা (রাদি.)-কে বলে দিলেন, যেহেতু তুমি আবূ জেহেলের সঙ্গে ওয়াদা করে এসেছো কাজেই তুমি আমাদের সঙ্গে আবু জেহেলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কেননা তুমি তাকে যা বলে এসেছে, তার সঙ্গে যে ওয়াদা করে এসেছো এর বিপরীত করাটাই ওয়াদার খেলাফ। কাজেই তুমি তা করতে পারবে না,
Comments
Post a Comment